ওমর ফারুক নাঈম::
একটা সময় সত্যিই জীবনটা চলে না। কিন্তু আমরা চালিয়ে নেই, মানিয়ে নেই, কারণ জীবন তো একটাই। জীবনে তো বাচতে হবে তাইনা। যখন আপনার শূন্য পকেট থাকবে তখন কেউই আপনার পাশে আসবে না। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন সবাইই ভুলে যাবে। এমনকি বিয়ে করার জন্য কোন পাত্রীও খোঁজে পাবেন না। যখন আপনি সফল হবেন। তখন পাত্রীর অভাব হবে না। কিন্তু ওই সময় কেউ আপনার স্ত্রী হওয়ার অধিকার রাখে। কারণ আপনার সফলতা তো আপনি নিজে একাই সংগ্ৰাম করে অর্জন করেছে। সেই ক্ষেত্রে যে শূন্য পকেটে পাশে থাকে, সেই সাফল্য শেষে স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এটাই জীবনের কঠিন বাস্তবতা।
১. জীবনের এমন একটা সময়টাতে দাঁড়িয়ে আছি, যখন আমার চারপাশের সবাই বিদেশ যাচ্ছে। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব প্রতিবেশী সবাই শুধু দেশ ছাড়ছেন। বিদেশ যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। কেউ তো আবার বিয়ে শাদি করছেন। আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের কপালে বিদেশও নেই বিয়েও নেই। এই যুবক বয়সে এসে জীবনের ভবিষ্যৎ রাত কতটা যে নির্ঘুম কেটেছে, তা বলার মতো নয়। হতাশা এসে মাথায় ভর করেছে। কিন্তু এক জায়গায় গিয়ে থমকে যেতে হয়। যে জীবনটাকে চালিয়ে যেতে হবে। সবকিছুকেই মানিয়ে নিতে হবে। অন্য আর পাঁচ দশটা মানুষের মতো আমার জীবন নয়। আমার জীবনে একটি যুদ্ধের ময়দান হিসেবে মেনে নিতে হবে। যেখানে জীবন সংগ্ৰামে আমি জয়ী হতে পারলে সবাই বাহবা দিবে। সবাই আমার জীবনের সাফল্যকে উপভোগ করবে। যদি কোন কারণে ব্যর্থ হই, তখন কেউই পাশে থাকবে না। জীবনে যুদ্ধ করতে করতে জীবনের স্বাধ কখনোই পাবেন না। ব্যর্থ হলে সেই ব্যর্থতার গ্লালানিও বইতে হবে। কেউ পাশে থাকবে না।
২. জীবনের এই পর্যায়ের সবচেয়ে বড় বাঁধ হতাশা। জীবন যুদ্ধের এই ময়দানে এসে কতো তরুণ যে অজুড়ে ঝড়ে পড়েছেন, তার সঠিক হিসেব নেই। মনে করে নিন জন্মটা হয়েছে এক উত্তাল সাগরের বুকে। যেখানে কোন তরী নেই। সাঁতরে সাঁতরে খোঁজতে হবে কূল। জীবনটাও একটি সাগর। এখানে একাই নিজের পথ নিজেকেই খোঁজে নিতে হবে। কেউ আসবে না হাত বাড়িয়ে। যদি কিনারায় চলে যান মানে সফলতার চূড়ায় উঠলেই দেখবেন কতো হাত বাড়িয়েছেন। এই হাতগুলোর এখন কোন প্রয়োজনই নয়। প্রয়োজন ছিল তখনই যখন একা সাগরে অসহায়ত্বের মতো হাঁপাচ্ছিলেন। কেতো এগিয়ে আসেনি। আসবেই না, কারণ এই পৃথিবীর এটাই বাস্তবতম নিষ্ঠুরতার। তবুও এই জীবনকে টেনে নিতে হয়।
৩. জীবন তরী বাইতে বাইতে যখন সফলতার চূড়ায় উঠলেন। তবেই কিন্তু শেষ নয়। আধার শেষে যেমন আলো আসে আবার আলোর পরই কিন্তু আবার আঁধার আসে। আজকে এই সুখ শান্তি বেশিদিন রয় না। হঠাৎ আসবে ঝড়। সেই ঝড় আবার ডুবিয়ে দিবে সাগরে। তখন সবাই ভূলে যাবে একে একে। সেই সাগরের অসহায় যাত্রী হবেন আবারও। কষ্ট দুঃখ আর অশ্রু জড়ানো আঁধার আবার এসেছি নামবে। পথটা হয়ে যাবে কঠিন। জীবনের কোন রঙ থাকবে না। প্রাণের মায়া ছেড়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জীবন তরীটা চালিয়ে যেতে হবে। যতোই ঝড় ওই সাগরে উঠুক এই তরী সাগরেই বাইতে হবে। কখনো ছেড়া পালটা আরো ছেড়ে যাবে। দিনক্ষণ রাতদিনের কোন সঠিক সীমা থাকবে না। তবুও জীবন তরীকে একাই গন্তব্যে নিয়ে যেতে হবে।
৪. যখন আঁধার আসে তখন জীবনে কোন রঙকে মন টানবে না। জীবন সাধ আল্লাদ থাকবে না। ফুলের সুবাস কেমন সেটাকেও ভুলিয়ে দিবে। রাতের আকাশে কখনো জোছনা উঠবে না। সুখ শান্তি দু:খ ভূলেও ডাকবে না। অশ্রু জড়তে জড়তে জীবনটা চলে যাবে। সংকট দেখা দিবে মহামারী হয়ে। নিন্দুকেরা হাসবে, ঠেলে দিবে বিপদের মুখে। অমাবস্যার আধার নেমে আসবে। আসতে পারে অপবাদ কিংবা কুৎসার ঝড়। কিন্তু জীবনে যদি অশ্রু না জড়ে তবে হাঁসির মূল্য কখনো বুঝা যাবে না। সুখ যে কতটা আরামদায়ক সেটা দু:খের সাগরে না ভসলে উপলব্ধি করা যায় না। সংকট না আসলে বুঝাই যেতো না যে, এই জীবনটা একটা সংগ্ৰাম। এই জীবনের সফলতাকে একমাত্র সেই উপভোগ করতে পারবে যে এই জীবন সংগ্ৰাম পাড়ি দিয়েছে। সেই তৃপ্তি আর কেউ পাবে না।
লেখক,
ওমর ফারুক নাঈম, সংবাদকর্মী, ঢাকা পোস্ট।
মোবাইল: ০১৭০৬৬২৪৬৩২
ইমেইল: omerfaruknaim@gmail.com
0 Comments